Search

Search

এক্সক্লুসিভ ব্রেকিং নিউজ পেতে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিন

চিন্তা করবেন না, আমরা স্প্যাম করি না!

ইন্টারকে উড়িয়ে ইউরোপের মুকুট অবশেষে পিএসজির

শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে পিএসজির কাতারি মালিকপক্ষ। ১৪ বছর আগে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ যখন পিএসজিকে কিনে নেয়, তখনই বোনা হয়েছিল এক স্বপ্নের বীজ। সেই স্বপ্ন বাস্তব করতে তারা খরচ করেছে বেসুমার অর্থ। দলে আনা হয়েছিল লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং নেইমারের মতো তারকাদের। কিন্তু ইউরোপের সেরা হওয়া তো সহজ নয়। বহুবার হতাশ হতে হয়েছে।

অনেকেই ভেবেছিল, পিএসজি বুঝি আর কখনও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততেই পারবে না। কিন্তু ভাগ্য তার নিজস্ব নিয়মে খেলে। ধৈর্যের পরীক্ষায় অবশেষে পাশ করল প্যারিস। কোচ লুইস এনরিকের হাত ধরে পিএসজি জিতল তাদের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি। মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইন্টার মিলানকে ৫–০ গোলে হারিয়ে প্যারিস সাঁ জার্মাঁ শুধু শিরোপাই নয়, ফুটবল বিশ্বেরও মন জয় করে নিয়েছে।

ফাইনালের এই রাত শুধু পিএসজির নয়, এনরিকের জীবনেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্যারিস শহর আগেই ঘোষণা দিয়েছিল—ফাইনালে পিএসজি যতবার গোল করবে, আইফেল টাওয়ার ততবার আলোকিত হবে। সেই আলো যেন শুধু জয় উদ্‌যাপন নয়, ছিল একজন বাবার ভালোবাসার ভাষাও। নয় বছর বয়সে ক্যানসারে মারা যাওয়া মেয়ে জানার স্মৃতিতেই ইউরোপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন এনরিকে। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব। ঈশ্বর যেন তার সেই চাওয়া পূর্ণ করে দিলেন এক অতুলনীয় ‘ত্রিমুকুট’ উপহার দিয়ে।

ইন্টার মিলান অবশ্য এই রাত ভুলে যেতে চাইবে। প্রথমার্ধের ২০ মিনিটের মধ্যেই তারা পিছিয়ে পড়ে দুই গোলের ব্যবধানে। বিরতির আগ পর্যন্ত আর গোল হজম না করলেও দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিরক্ষা লাইন ভেঙে পড়ে সম্পূর্ণভাবে। ৬৩, ৭৩ ও ৮৬ মিনিটে আরও তিন গোল হজম করে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে ইতালিয়ান ক্লাবটি। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয়ার্ধেই যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে।

ইন্টার কোচ সিমোনে ইনজাঘিও ছিলেন অসহায়। ম্যাচের প্রথম দুটি গোলের পর উত্তেজনায় জর্জরিত হয়ে গায়ের কোট খুলে ফেলেন তিনি। কিন্তু এরপর সবকিছুই যেন থেমে যায়। গোলের পর গোল হজম করে মুখ থুবড়ে পড়ে ইন্টার। শেষ বাঁশির আগেই ইনজাঘির চেহারায় ছিল আত্মসমর্পণের ছাপ।

পিএসজির হয়ে ১২ মিনিটে প্রথম গোলটি করেন আশরাফ হাকিমি। আট মিনিট পর দ্বিতীয় গোলটি আসে দেজিরে দুয়ের পা থেকে। বিরতির পর ৬৩ মিনিটে ফের গোল করেন দুয়ে। এরপর খিচা কাভারেস্কাইয়া ৭৩ মিনিটে এবং মাইয়ুলু ৮৬ মিনিটে গোল করে উৎসবে রঙ ছড়ান।

গোল আসতে থাকলে যেমন ইন্টার নিশ্চুপ হতে থাকে, তেমনি উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন এনরিকে। একেকটি গোলে ডাগআউট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি। চতুর্থ গোলের পর আবেগ এতটাই উথলে ওঠে যে খুলে ফেলেন নিজের জ্যাকেট। মেয়েকে হারিয়ে যে বিষাদে ছিলেন এতদিন, এই রাত যেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্ত।

ধারাভাষ্যকারদের কথায়, এনরিকেকে এতটা আনন্দে ডুবে থাকতে বহুদিন দেখা যায়নি। ২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে ‘ট্রেবল’ জয়ের স্মৃতিও আজ যেন ম্লান হয়ে গেল। কারণ এই জয় শুধু ফুটবলীয় অর্জন নয়, এক বাবার হারিয়ে যাওয়া সন্তানের জন্য নিঃশব্দে বলা ভালোবাসার কথাও।

সম্পর্কিত খবর :

;