ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না—মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এ দাবি উড়িয়ে দিলেন ট্রাম্প

খোদ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে বলা হয়েছিল ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই। বরং ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করার “খুব কাছাকাছি” অবস্থানে রয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এর আগে কংগ্রেসে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালাচ্ছে না এবং সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই ২০০৩ সালে স্থগিত করা ওই কর্মসূচিকে পুনরায় অনুমোদন দেননি। তবে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি পাত্তা দিচ্ছি না ও (তুলসী গ্যাবার্ড) কী বলেছে।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অবস্থানের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, যিনি বহুদিন ধরেই একটি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে বড় হুমকি বলে বিবেচনা করে আসছেন। তবে ট্রাম্পের এই অবস্থান তাকে তার নিজের প্রশাসনের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গেই বিরোধপূর্ণ অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের 'সিচুয়েশন রুমে' জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়।
গোয়েন্দা প্রধান গ্যাবার্ড অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্যকে দ্বিমত হিসেবে দেখছেন না। তিনি সিএনএনকে বলেন, “আমরা একই পাতায় আছি।” পাশাপাশি, তার আগের মন্তব্য গণমাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তবে তিনি মার্চ মাসের কংগ্রেস সাক্ষ্যে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “গোয়েন্দা মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না এবং খামেনেই তা অনুমোদন দেননি।”
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) একাধিকবার সতর্ক করেছে যে ইরান চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মতো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ করে রেখেছে। যদিও ইরান সবসময় দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
একই ধরনের মূল্যায়ন ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে বাইডেন প্রশাসনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও, যেখানে বলা হয়েছিল, “ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না, তবে তারা এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে যা ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির উপযোগী অবস্থা তৈরি করতে পারে।”
এরআগে প্রথম মেয়াদেও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ট্রাম্পের দ্বন্দ্ব দেখা গেছে, বিশেষ করে যখন তিনি ২০১৮ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেন, অথচ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের প্রমাণ দিয়েছিল।
এবার ইরান ইস্যুতেও একই ধরনের মতপার্থক্য দেখা দিল। বর্তমান প্রশাসনে ট্রাম্প অনুগতদের দিয়ে দল সাজিয়েছেন। তুলসি গ্যাবার্ড, যিনি ২০২২ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টি ত্যাগ করেন ও ট্রাম্পকে সমর্থন দেন, তিনি নিজেও গোয়েন্দা বিষয়ে তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ বলে সমালোচকদের দাবি।
এছাড়া ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিতেও গোয়েন্দা মূল্যায়নের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের বহিষ্কারে তিনি ১৭৯৮ সালের 'এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট' ব্যবহার করেন এবং দাবি করেন 'ট্রেন দে আরাগুয়া' গ্যাং সরকার-সমর্থিত। কিন্তু এপ্রিলের গোয়েন্দা রিপোর্টে এ ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গ্যাবার্ড পরে এই রিপোর্টের সঙ্গে যুক্ত দুই অভিজ্ঞ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেন, এবং হোয়াইট হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে বলেন, “ট্রাম্প আমাদের জাতিকে সুরক্ষিত রাখতে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”