বিনা কারণে কেন পদত্যাগ করবঃ বিসিবি সভাপতি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না, এমনই দৃঢ় ঘোষণা দিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। গত রাতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সরকার তাকে আর বিসিবির সভাপতি হিসেবে রাখতে চাচ্ছে না। কয়েক ঘণ্টা চিন্তা-ভাবনার পরই আজ ফারুক জানিয়ে দিলেন, পদত্যাগ নয়, তিনি লড়াই করে যাবেন।
একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফারুক স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “সরকার আমাকে আর রাখতে চায় না, এটা আমাকে বলা হয়েছে। কিন্তু কেন রাখতে চায় না, সেই কারণটা এখনো কেউ জানায়নি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দায়িত্বে থাকব।”
ফারুকের এই অবস্থানকে অনেকেই দেখছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে, বিসিবিতে বারবার রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এক সাহসী দাঁড়িয়ে থাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় দলের এক সাবেক অধিনায়ক কড়া ভাষায় বলেন, “বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এভাবে ছেলেখেলা চলতে পারে না। আজ এক জনকে বসালাম, কাল কোনো কারণ ছাড়াই তাকে সরিয়ে দিলাম! এভাবে চললে তো আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।”
এখানেই শেষ নয়—বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরেও সংবেদনশীল। আইসিসি (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) বরাবরই ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপকে বিরোধিতা করে এসেছে। অতীতে এমন হস্তক্ষেপের জেরে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশকেও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস ও সাজ্জাদুল আলমের জায়গায় এনএসসি কোটায় ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে বোর্ডে আনে। নাজমুল হাসানের পদত্যাগের পর পরিচালকদের সিদ্ধান্তেই ফারুক আহমেদ সভাপতি নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৯ মাসের মাথায়, কেন তাকে সরাতে চায় সরকার—তা এখনও পরিষ্কার নয়।
তবে, গুঞ্জন উঠেছে বিসিবির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে ভাবা হচ্ছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। যদিও আমিনুল নিজে জানিয়েছেন, তাকে এখনো সরাসরি সভাপতির প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তবে বিসিবিতে একটি দায়িত্বপূর্ণ পদে থাকার আভাস দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী তিনি আইসিসি থেকে অনুমতিও নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, এনএসসি ইতিমধ্যেই তাকে একজন পুরোনো কাউন্সিলরের জায়গায় মনোনীত করে চিঠি ইস্যু করেছে। এর মধ্যেই ৩১ মে বিসিবির নির্ধারিত পরিচালনা পর্ষদের সভা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তা স্থগিত হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।