ট্রাম্পের সোনালি গম্বুজের ঢাল এবং কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন

৯/১১-এর পর থেকে, প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকে জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন।
এই ধারাবাহিকতায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাকে অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশের জন্য একটি গ্রেট আয়রন ডোম তৈরি করব—যেমনটি আগে কখনও দেখা যায়নি।” ট্রাম্প এই প্রকল্পটিকে জাতীয় গৌরব ও শিল্পখাতের পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেন।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুতই তার এই ভাবনাকে নীতিতে রূপ দেন।
দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি ‘আমেরিকার জন্য আয়রন ডোম’ শিরোনামে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে প্রতিরক্ষা বিভাগকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশ দেন—যার লক্ষ্য হল দিন দিন বেড়ে চলা আকাশপথে হুমকির মোকাবিলা।
এর কয়েক সপ্তাহ পরেই এই উদ্যোগের নাম পাল্টে রাখা হয় গোল্ডেন ডোম ফর আমেরিকা (Golden Dome for America) ।
নাম পরিবর্তনটি শুধু ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে আলাদা হওয়ার বার্তা দেয়নি, বরং এটি আমেরিকার নিজস্ব প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশালতা ও প্রতীকী উদ্দেশ্যকে তুলে ধরে।
নতুন যুগের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা?
গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যেখানে থাকবে মহাকাশভিত্তিক সেন্সর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম এবং বিভিন্ন ধরনের গতিশীল ও অগতিশীল বাধাদানকারী (interceptor), যা ব্যালিস্টিক, হাইপারসনিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
এই প্রকল্পের সবচেয়ে জটিল অংশ হলো মহাকাশভিত্তিক বাধাদানকারী অস্ত্রের প্রস্তাবিত নেটওয়ার্ক, যার মধ্যে থাকবে লেজারও—যা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরপরই তা ধ্বংস করতে সক্ষম হবে।
যেখানে ইসরায়েলের সিস্টেমটি ছোট রেঞ্জের রকেট ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়, সেখানে গোল্ডেন ডোমের পরিসর অনেক বড়। এটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং মহাকাশভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যেমন Fractional Orbital Bombardment Systems (FOBS) এর মতো হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হওয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে।
২০ মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দেবেন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন (Michael Guetlein)। ট্রাম্প এটিকে “আমাদের দেশের সাফল্য ও এমনকি টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য” বলে বর্ণনা করেন।
প্রকল্পটির আকার বিশাল। কংগ্রেশনাল বাজেট অফিসের প্রাথমিক অনুমান অনুযায়ী, আগামী দুই দশকে এর ব্যয় ৫৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পরবর্তী বছরের প্রতিরক্ষা বাজেটে ২৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই প্রকল্পের প্রধান উপাদান—স্যাটেলাইট, মহাকাশভিত্তিক সেন্সর ও বাধাদানকারী অস্ত্র এবং উৎক্ষেপণ কাঠামো—উন্নয়নের জন্য।
ট্রাম্প জানান, এই ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প তিন বছরের মধ্যে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটিই হবে প্রথমবার, যখন অস্ত্র মহাকাশে স্থাপন করা হবে।
এই প্রকল্পের সাফল্য অনেকাংশেই নির্ভর করছে মহাকাশভিত্তিক সিস্টেমের ওপর, কারণ এসব সিস্টেমই দ্রুতগামী, কঠিনভাবে শনাক্তযোগ্য এবং উচ্চ গতিতে চালিত হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর।
তবে শুরুর এই গতি সত্ত্বেও, প্রকল্পটির প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা এবং কৌশলগত স্থায়িত্ব নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
গোল্ডেন ডোম প্রকৃতপক্ষে একটি কৌশলগত বিপ্লব হবে, না কি মার্কিন সরকারের জন্য একটি ব্যয়বহুল ঝুঁকি—তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও এটি উদ্ভাবন ও প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতি দেয়, তবুও এর ফলে বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং এতে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া বা উত্তেজনা বাড়তে পারে।
প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারিকরণ
গোল্ডেন ডোম প্রকল্পটি শুধু এর আকার ও প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণেই নয়, বরং বেসরকারি খাতের উপর অভূতপূর্ব নির্ভরতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এটি ইতিমধ্যে সাম্প্রতিক মার্কিন ইতিহাসে বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রতিরক্ষা উদ্যোগগুলোর একটি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৮০টিরও বেশি কোম্পানি এই প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নরথ্রপ গ্রুম্যান, বোয়িং এবং আরটিএক্স-এর মতো বড় প্রতিরক্ষা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, লকহিড মার্টিন ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ মার্কেটিং ক্যাম্পেইন শুরু করেছে, যাতে তারা এই উদীয়মান প্রতিরক্ষা ল্যান্ডস্কেপে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।
স্পেসএক্সের নেতৃত্বে গোল্ডেন ডোম প্রকল্প, এবং রাজনীতি-প্রভাবিত প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে উদ্বেগ
একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে স্পেসএক্স-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম কাজ করছে—যার অংশ প্যালান্টিয়ার ও অ্যান্ডুরিল।
এই দলটি এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে পৃথিবীর নিকটবর্তী কক্ষপথে (low Earth orbit) শত শত স্যাটেলাইটের একটি নক্ষত্রপুঞ্জ স্থাপন করা হবে, যা বাস্তব সময়ে আগত হুমকি শনাক্ত, অনুসরণ ও ধ্বংস করতে পারবে।
এই কোম্পানিগুলোর বৈশিষ্ট্য কেবল তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতায় নয়, বরং এই প্রকল্প ঘিরে রাজনৈতিক ও কৌশলগত বর্ণনার ওপর তাদের ব্যাপক প্রভাবেও প্রতিফলিত হয়।
স্পেসএক্স, প্যালান্টিয়ার এবং অ্যান্ডুরিল—তিনটিই প্রতিষ্ঠা করেছেন এমন উদ্যোক্তারা, যারা ট্রাম্পের প্রতি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছেন।
স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী এলন মাস্ক বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বিভাগে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। একইভাবে প্যালান্টিয়ারের চেয়ারম্যান পিটার থিয়েল এবং অ্যান্ডুরিলের শীর্ষ নেতৃত্বও ট্রাম্পপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা বৃত্তের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ
কয়েকজন আইনপ্রণেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, বেসরকারি খাতের উচ্চাভিলাষ এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব মিলিয়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া দুর্নীতিগ্রস্ত ও পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়তে পারে।
সমালোচকরা সতর্ক করে বলেছেন, যাদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা অবকাঠামো এমন কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দিলে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ক্ষতির মুখে পড়বে।
এ মাসের শুরুতে ৪২ জন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য একটি চিঠির মাধ্যমে দাবি জানান যে, গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে চুক্তি বণ্টনের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হোক।
তাদের চিঠিতে লেখা হয়:
"এই সবকিছু আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে যে গোল্ডেন ডোম তৈরির প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি আদৌ আমেরিকানদের সুরক্ষার জন্য কার্যকর, নাকি এগুলোর মূল লক্ষ্য হলো মি. মাস্ক এবং অন্যান্য অভিজাতদের ধনী করে তোলা।"
প্রতিরক্ষায় বেসরকারি খাতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা
গোল্ডেন ডোম প্রকল্পে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণ বাড়তে থাকা মার্কিন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায় একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এখানে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো আর কেবল ঠিকাদার নয়, বরং সামরিক শক্তির বিকাশ ও প্রয়োগে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছে।
এটি বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্পেসএক্সের কথিত প্রস্তাবে, যেখানে তারা সরকারকে একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক মডেলের প্রস্তাব দিয়েছে। এর অধীনে সরকার নিজস্ব মালিকানার বদলে বেসরকারি মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার কিনবে।
যদিও এই মডেলে কাজের গতি বাড়তে পারে, তবুও এতে বেশ কিছু কাঠামোগত দুর্বলতা তৈরি হয়। এর মধ্যে রয়েছে— জনগণের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়া, এবং বেসরকারি মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি।
সুতরাং গোল্ডেন ডোম শুধু একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা পরীক্ষাই নয়, বরং এটি দেখায় যে ২১শ শতকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তার সামরিক শক্তি সংগঠিত, নিয়ন্ত্রিত এবং অনুমোদিত করে—তার একটি গভীর রূপান্তর।
কৌশলগত প্রতিক্রিয়া: প্রতিরোধ নাকি উত্তেজনা বৃদ্ধি?
গোল্ডেন ডোম প্রকল্পের ঘোষিত লক্ষ্য হলো এমন একটি জরুরি দুর্বলতা মোকাবিলা, যা মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বাড়তে থাকা হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA)-এর সাম্প্রতিক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি ব্যাপক হারে বাড়বে—তথ্য অনুযায়ী, হুমকিগুলোর ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত পরিপক্বতাও অনেক বেশি হবে।
যখন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এখনো একটি বড় উদ্বেগ, তখন কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীরা—বিশেষ করে চীন ও রাশিয়া—এমন ডেলিভারি সিস্টেম তৈরি করছে, যা বিদ্যমান মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে বা পরাস্ত করতে সক্ষম।
DIA-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে ৭০০ পারমাণবিক ওয়ারহেড-সজ্জিত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) মোতায়েন করতে পারে।
উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে পৌঁছাতে সক্ষম ICBM প্রদর্শন করেছে, এবং ইরান চাইলে ২০৩৫ সালের মধ্যে অনুরূপ সক্ষমতা অর্জন করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারসংক্ষেপে, গোল্ডেন ডোম প্রকল্প মার্কিন প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও রাজনীতির সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ—যা ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতি ও রাষ্ট্র-নিরাপত্তা কাঠামোকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। তবে এটি একই সঙ্গে গভীর নৈতিক, কৌশলগত ও রাজনৈতিক বিতর্কের সূচনাও করেছে।
গোল্ডেন ডোমের প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত উদ্বেগ
গোল্ডেন ডোম প্রকল্প একটি স্তরভিত্তিক, মহাকাশ-সক্ষমতাভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কাঠামো। তবে এ ধরনের ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু কৌশলগত ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সেই পারস্পরিক ঝুঁকির নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে, যা পারমাণবিক প্রতিরোধনীতির (nuclear deterrence) ভিত্তি। যদি কোনো পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে যে তার second-strike capability—অর্থাৎ পারমাণবিক হামলার পর পাল্টা আঘাত হানার সক্ষমতা—আংশিক হলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে, তাহলে এটি শক্তির ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, প্রতিপক্ষ শক্তির ভারসাম্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হেলে পড়েছে মনে করতে পারে। ফলে গোল্ডেন ডোমের মতো একটি ব্যবস্থা স্থিতিশীলতা বাড়ানোর পরিবর্তে সঙ্কটকালীন ভুল হিসাব কিংবা পূর্বসতর্ক হামলার (pre-emptive escalation) ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যত বেশি কার্যকর ও বিশ্বাসযোগ্য এই ব্যবস্থা হবে বলে মনে হবে, ততই এটি প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধ করার পরিবর্তে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
চীন ও রাশিয়া এক যৌথ বিবৃতিতে সতর্ক করেছে যে এই প্রকল্প বিশ্ব নিরাপত্তার ভারসাম্যকে বিপন্ন করতে পারে এবং মহাকাশকে সামরিকীকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উভয় দেশই এটি যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সক্ষমতার একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণ হিসেবে অভিহিত করে, এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোকে ‘শীতল যুদ্ধের মানসিকতা’ ও শূন্য-সমমূল্য চিন্তা (zero-sum game) পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই বিবৃতিগুলো প্রতিফলিত করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিযোগীরা প্রকল্পটিকে একটি সম্ভাব্য কৌশলগত ভারসাম্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছে, যা পাল্টা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাওয়া এই প্রকল্পই উল্টো উত্তেজনা উসকে দিতে পারে এবং শেষপর্যন্ত বিশ্বকে আরও অনিরাপদ করে তুলতে পারে।
খেলাটির নিয়ম বদলে দিতে পারে গোল্ডেন ডোম — তবে তার মূল্যও আছে
গোল্ডেন ডোম প্রকল্প সত্যিই কৌশলগত খেলায় নিয়ম বদলে দিতে পারে, তবে তা কোনো মূল্য ছাড়াই নয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র জরুরি প্রতিরক্ষা দায়িত্ব বেসরকারি খাতে স্থানান্তর করছে এবং একযোগে পারমাণবিক প্রতিরোধনীতির কার্যকারিতা দুর্বল করছে। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, জাতীয় নিরাপত্তা এখন ক্রমশ বাণিজ্যিক উদ্ভাবন ও কৌশলগত অনিশ্চয়তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ছে।
এই অর্থে, গোল্ডেন ডোম কেবল একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নয়; এটি একবিংশ শতাব্দীর যুদ্ধনীতি ও শক্তি কাঠামোর একটি জানালা, যেখানে ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—বরং বেসরকারি কোম্পানি, অ্যালগরিদম এবং কক্ষপথে ঘুরতে থাকা প্ল্যাটফর্মগুলোর হাতেও ন্যস্ত হচ্ছে।
এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যেখানে রাষ্ট্র এবং কর্পোরেট শক্তির সংমিশ্রণ জাতীয় নিরাপত্তার দিকনির্দেশ ঠিক করছে—তবে সেই নিরাপত্তা কতটা টেকসই, তা এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।
মেহমেত এমরে কাহরামান