স্মার্টফোন ব্যবহারে কমতে পারে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি

প্রচলিত আছে যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে এবার এর বিপরীত কথা শোনা যাচ্ছে। "ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ার" জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা তাই বলছে। এতে বলা হয়, প্রযুক্তি বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
গবেষণাটির সহলেখক প্রফেসর মাইকেল স্কালিন বলেন, “মানুষ প্রায়ই ‘ব্রেইন রট’, ‘ব্রেইন ড্রেইন’, এমনকি ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ শব্দগুলো ব্যবহার করে, যা শোনার পর মনে হয় ডিজিটাল ডিভাইস প্রতিবার ব্যবহারের সময়ই মস্তিষ্কের ক্ষতি করছে। তবে বাস্তবে বিষয়টি এমন নয়।”এই ধারণার সত্যতা যাচাই করতে স্কালিন ও তার সহকর্মী প্রফেসর জ্যারেড বেনজে ৫৭টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা বিশ্লেষণ করেন, যাতে ৪ লাখ ১০ হাজার মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ ব্যক্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের বেশিরভাগই উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে, তবে কিছু গবেষণায় অন্যান্য অঞ্চলও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ফলাফল ছিল আশ্চর্যজনক। প্রযুক্তি ব্যবহার মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং ৫৭টির মধ্যে ৫১টি গবেষণায় দেখা গেছে—প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ বা মানসিক দুর্বলতার ঝুঁকি কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।তবে গবেষকরা বলছেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাবের কারণ হতে পারে উচ্চশিক্ষা, ভালো আর্থসামাজিক অবস্থা বা মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং পেশা। তবে এসব বিষয় বিবেচনায় রেখেও প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট।
স্কালিন বলেন, “বয়স্কদের নতুন কিছু শেখা ও মানসিকভাবে সক্রিয় থাকার জন্য গবেষকরা সবসময় পরামর্শ দেন। স্মার্টফোন বা কম্পিউটার শেখার মাধ্যমে সে সুযোগ তৈরি হয়।”
বেনজে এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করেন “তিনটি C” দিয়ে: জটিলতা (complexity), সংযোগ (connection), ও ক্ষতিপূরণমূলক আচরণ (compensatory behaviours)। যেমন, GPS বা ডিজিটাল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে বয়স্করা দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন।
সবশেষে, গবেষণা বলছে প্রযুক্তি সরাসরি স্মৃতিভ্রংশ রোধ করতে পারে এমন প্রমাণ এখনো সীমিত, তবে প্রযুক্তির সঠিক ও সচেতন ব্যবহার বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে – এবং এটি ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।
সূত্র : বিবিসি সায়েন্স ফোকাস