Search

Search

এক্সক্লুসিভ ব্রেকিং নিউজ পেতে আপনার মোবাইল নম্বরটি দিন

চিন্তা করবেন না, আমরা স্প্যাম করি না!

৪০ বছরের সশস্ত্র বিদ্রোহের নাটকীয় পরিসমাপ্তী : এরপর কী ?

তুরস্কের বিরুদ্ধে ৪০ বছর বিদ্রোহ করে আসা নিষিদ্ধ পিকেকে অস্ত্র ত্যাগ করে নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের কারাবন্দী নেতা আব্দুল্লাহ ওকালানের বিলুপ্তির আহ্বানের পর এ পদক্ষেপ নেওয়া হলো।

কুর্দিদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে পিকেকে। কুর্দিরা মেসোপটেমীয় সমতল ভূমি এবং পার্বত্য এলাকার অন্যতম আদিবাসী। মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও তাদের কখনোই স্বাধীন ভূখণ্ড ছিল না। তুরস্ক, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, আর্মেনিয়া এই পাঁচটি দেশের কুর্দিভাষী অঞ্চলগুলোর মধ্যে কুর্দিস্তান বিস্তৃত। তবে তুরস্কে এর অংশ সবচেয়ে বেশি। তুরস্কের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কুর্দি। তাদের কোন একক উপভাষা নেই। বিভিন্ন ধর্ম এবং বিশ্বাস অনুসরণ করলেও তাদের বেশিরভাগই সুন্নী মুসলিম।

২০ শতকের শুরুতে কুর্দিদের অনেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা ভাবতে শুরু করে যার নাম ভাবা হয় কুর্দিস্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমা মিত্ররা SEVRES চুক্তির মাধ্যমে কুর্দিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তিন বছর পর এই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। কুর্দিরা তুরস্কসহ আশেপাশের দেশগুলোতে সংখ্যালঘু হিসেবে থেকে যায় ।

১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে তুরস্কে ব্যাপক সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে। এই সময় কুর্দিরা সাংগঠনিকভাবে সংগঠিত হতে শুরু করে। বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী গঠিত হয়। এর মধ্যে পিকেকে অন্যতম। পিকেকের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাযার। ধীরে ধীরে সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পিকেকে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয় ।

একসময় পিকেকে নিজেদের লক্ষ্যে পরিবর্তন আনে। তারা অধিক স্বৈরাচার এবং কুর্দির অধিকারের দিকে নজর দেয়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য ৪০ হাজারের বেশী মানুষ নিহত হয় ।

তুর্কি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পিকেকে সন্ত্রাাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ হয়। তারা জানায়, পিকেকে তার ঐতিহাসিক যাত্রা শেষ করেছে এবং এই অস্ত্রযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছে। ANF এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, এখন থেকে কুর্দি সমস্যা গণতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে সমাধান করা হবে।

ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৬ বছর বয়সি ওকালান তার সংগঠনকে অস্ত্র ত্যাগ এবং বিলুপ্ত ঘোষণা করেন।পিকেকের নেতা ১৯৯৯ সাল থেকে ইস্তাম্বুলের দক্ষিণ পশ্চিমে মারমারা সাগরের একটি দ্বীপে একাকী কারাবাস করছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ওকালান কারাগার থেকে লেখা একটি চিঠিতে বলেছেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ধারণ এবং বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। রাজনৈতিক ঐকমত্যই মৌলিক মাধ্যম। ওকালান এবং তার সমর্থকরা নিষিদ্ধ ঘোষণার বিনিময়ে কী পাবেন তা এখনো অস্পষ্ট, তবে ওকালান প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন।

কুর্দির রাজনৈতিক নেতারা নতুন রাজনৈতিক সংলাপ এবং কুর্দিস্তানের অধিকারের জন্য একটি বৃহত্তর পথের আশা করছেন। উভয় পক্ষেরই এখন একটা চুক্তি সম্পাদনের উপযোগিতা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুর্কি সেনাবাহিনীর দ্বারা পিকেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আঞ্চলিক পরিবর্তনগুলো তাদের এবং তাদের সহযোগীদের ইরাক ও সিরিয়ায় কার্যক্রম চালানো কঠিন করে তুলেছে।

২০২৮ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোয়ান আবারো প্রেসিডেন্ট হতে চাইলে তার কুর্দি রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন প্রয়োজন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের একে পার্টির একজন মুখপাত্র বলেছেন, সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক গঠনের ক্ষেত্রে পিকেকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রক্রিয়া রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, যদি পিকেকের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় তাহলে এটি শান্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণা ট্যাংক চ্যাথাম হাউজের উইনথ্রোপ রজার্স বলেছেন, কুর্দির রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি পূরণে তুরস্কে একটা বড় গণতান্ত্রিক রুপান্তর প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কিছু তুর্কি নেতাদের মধ্যে সদিচ্ছা দেখা গেছে, যা পিকেকে বিলুপ্তির প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়িত করবে। বলা যায়, অনেকদিক থেকেই বল এখন তুরস্কের কোর্টে।

সম্পর্কিত খবর :

;