এক্সপ্লেইনার : ট্রাম্প কেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কী কী পদক্ষেপ
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ তদন্তে উদ্যোগ নেওয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)–এর প্রধান প্রসিকিউটর করিম খানকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় তার অফিসিয়াল মাইক্রোসফট ইমেইল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাজ্যে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইসিসির ৯০০ কর্মীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে "অবৈধ তদন্ত" চালাচ্ছে।
ওয়াশিংটন হুঁশিয়ারি দিয়েছে, করিম খানকে অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত বা যে কোনো ধরনের সহায়তা দিলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এরইমধ্যে দুইটি মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা আইসিসির সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করেছে। এক কর্মকর্তার ভাষ্য, সরকারি প্রতিশোধের আশঙ্কায় অনেকে এখন আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন।
কেন ক্ষুব্ধ ট্রাম্প প্রশাসন
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে মূল কারণ হিসেবে আইসিসি কর্তৃক ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন এই পরোয়ানাকে "অবৈধ ও ভিত্তিহীন" বলে আখ্যায়িত করে, আইসিসি কর্মকর্তাদের এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ জব্দের নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, যারা আইসিসির তদন্তে সহায়তা করছেন, তাদেরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া
আইসিসি এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে এবং তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ৭৯টি দেশ এই নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়ে আইসিসির স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞা আইসিসির চলমান তদন্ত, যেমন আফগানিস্তান, ইউক্রেন, মিয়ানমার ও সুদানে যুদ্ধাপরাধের তদন্তে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এছাড়া, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান এবং তার দলের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা আদালতের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আইসিসির স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা রক্ষায় সমর্থন জানিয়েছেন। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থানে অনড় থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা বলছে।