মস্তিষ্কের তরঙ্গ থেকে শব্দ অনুবাদে অস্ট্রেলীয় গবেষকদের যুগান্তকারী সাফল্য

অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল তৈরি করেছেন, যা পরিধানযোগ্য একটি ক্যাপের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ (ব্রেনওয়েভ) শনাক্ত করে সেগুলোকে নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যে রূপান্তর করতে সক্ষম। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটি এক নতুন দিগন্তের সূচনা বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র স্নায়বিক বা মানসিক সমস্যা থাকা রোগীদের জন্য সহায়ক হবে না, বরং এটি মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও আমূল বদলে দিতে পারে। আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন (ABC)।
এই যুগান্তকারী এআই মডেলটি তৈরি করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনির গ্রাফিনএক্স-হিউম্যান-সেন্ট্রিক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেন্টারের গবেষক দল। দলে ছিলেন বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল লিয়ং, পিএইচডি শিক্ষার্থী চার্লস ঝৌ এবং তাদের তত্ত্বাবধায়ক চিন-টেং লিন।
তারা ডিপ লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইইজি (EEG) অর্থাৎ মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সংকেত বিশ্লেষণ করে তা নির্দিষ্ট শব্দে রূপান্তর করতে সক্ষম হন। লিন জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে এআই মডেলটিকে সীমিত সংখ্যক শব্দ ও বাক্য শেখানো হয়েছে যাতে প্রতিটি শব্দ আলাদাভাবে শনাক্ত করা সহজ হয়।
৯০% নির্ভুল হওয়ার লক্ষ্য
গবেষকরা বর্তমানে আরও অংশগ্রহণকারীকে যুক্ত করছেন, যারা ইইজি ক্যাপ পরে টেক্সট পড়বেন, যাতে মডেলটির নির্ভুলতা আরও বাড়ানো যায়। ভবিষ্যতে তারা দুই ব্যক্তির মধ্যে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চিন্তাভিত্তিক যোগাযোগের পরিকল্পনাও করছেন।
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইলেকট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ মোহিত শিবদাসানি জানান, বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরে জীববৈজ্ঞানিক সংকেতের ধরন শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখন এআই প্রযুক্তি এমন ব্রেনওয়েভ প্যাটার্নও শনাক্ত করতে পারছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে এআই যদি প্রতিস্থাপনযোগ্য যন্ত্রের (ইমপ্ল্যান্টেবল ডিভাইস) সঙ্গে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এটি ব্যক্তির চিন্তাধারার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।
গবেষক দল এখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ নির্ভুলতায় চিন্তা থেকে লেখা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, এবং তারা ৯০ শতাংশ নির্ভুলতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এটি সফল হলে মস্তিষ্কের ভাষা আর বাস্তব ভাষার মধ্যকার ব্যবধান দূর হয়ে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।