পরিবর্তনের অকল্পনীয় গতি বাড়াচ্ছে এআই

যদি মনে হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-এর গ্রহণযোগ্যতা মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া বা ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো আগের কোনো প্রযুক্তিগত বিপ্লবের চেয়ে ভিন্ন — তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন না। এটি সত্যিই আলাদা।
ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট মেরি মিকার সম্প্রতি ৩৪০ পৃষ্ঠার একটি স্লাইড শো রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন — যার ৫১টি পৃষ্ঠায় “অভূতপূর্ব” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, কীভাবে AI দ্রুত উন্নয়ন, গ্রহণযোগ্যতা, বিনিয়োগ ও ব্যবহারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে। একের পর এক চার্ট দিয়ে তিনি এটা প্রমাণ করেছেন।
তিনি তার রিপোর্টে লিখেছেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিকাশ সংক্রান্ত পরিবর্তনের গতি ও ব্যাপকতা সত্যিই অভূতপূর্ব — এবং তা উপাত্ত দ্বারা সমর্থিত।”
এমন একটি রিপোর্ট লেখার পেছনে একটি কাব্যিক ইতিহাসও রয়েছে। মেরি মিকার হচ্ছেন ভিসি প্রতিষ্ঠান Bond -এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ অংশীদার। তিনি আগে “কুইন অব দ্য ইন্টারনেট” নামে পরিচিত ছিলেন, তার বার্ষিক Internet Trends রিপোর্টের জন্য। Bond প্রতিষ্ঠার আগে তিনি ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত Kleiner Perkins-এ গ্রোথ প্র্যাকটিস পরিচালনা করতেন, যেখানে তিনি Facebook, Spotify, Ring, ও Block (তৎকালীন Square)-এর মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন।
২০১৯ সালের পর থেকে তিনি আর কোনো ট্রেন্ডস রিপোর্ট প্রকাশ করেননি। কিন্তু এবার তিনি তার দক্ষতা আবার কাজে লাগিয়েছেন এবং বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করেছেন, কীভাবে AI এর গ্রহণযোগ্যতা মানব ইতিহাসের যেকোনো প্রযুক্তিকে ছাড়িয়ে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ: ChatGPT, মাত্র ১৭ মাসে ৮০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী পেয়েছে —যা অভূতপূর্ব। এআই ভিত্তিক কোম্পানির সংখ্যা এবং যেসব প্রতিষ্ঠান দ্রুত বড় অংকের বার্ষিক আয় করছে — এটিও অভূতপূর্ব। ব্যবহারের খরচ যে হারে কমছে —সেটিও অভূতপূর্ব। যদিও একটি AI মডেল প্রশিক্ষণের খরচ এখন এক বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে (এটিও অভূতপূর্ব), কিন্তু “ইনফারেন্স” খরচ — অর্থাৎ যারা AI ব্যবহার করছে তাদের জন্য খরচ — গত দুই বছরে ৯৯% কমে গেছে, প্রতি এক মিলিয়ন টোকেনের খরচের ভিত্তিতে। তিনি এই তথ্য Stanford-এর গবেষণা থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেভাবে একে অপরের ফিচার অনুকরণ করছে, বিশেষ করে ওপেন সোর্স ও চীনা মডেলগুলো তার গতি এবং খরচ কমাও অভূতপূর্ব। তিনি দেখিয়েছেন Nvidia-র ২০২৪ সালের Blackwell GPU তাদের ২০১৪ সালের Kepler GPU-এর তুলনায় প্রতি টোকেনে ১,০৫,০০০ গুণ কম শক্তি ব্যবহার করে।
এদিকে Google-এর TPU (Tensor Processing Unit) এবং Amazon-এর Trainium এর মতো চিপও ক্লাউডে ব্যবহারের জন্য দ্রুত গতিতে তৈরি হচ্ছে।
তবে একটি ক্ষেত্রে AI এখনো আগের প্রযুক্তিগত বিপ্লবগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি — আর তা হলো আর্থিক লাভ। যদিও ভিসিরা দ্রুতগতিতে AI-তে বিনিয়োগ করছে, AI কোম্পানি ও ক্লাউড সেবাদাতারা এখনো অনেক অর্থ ব্যয় করছেন। AI-তে পরিকাঠামোগত বিনিয়োগ বিশাল।
মিকার উল্লেখ করেছেন এটা ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো, যারা দ্রুত উন্নতির সুবিধাভোগী, এবং এই প্রতিযোগিতা খরচ কমাচ্ছে। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি যে বর্তমান AI প্রতিযোগীদের মধ্যে কারা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক পরিণামে পৌঁছাবে, এবং পরবর্তী প্রজন্মের টেক জায়ান্ট হয়ে উঠবে। তিনি লিখেছেন, “বর্তমানে যারা AI নিয়ে এগোচ্ছে, তারা অর্থ উপার্জনের সমীকরণের কোন পাশে পড়বে — তা কেবল সময়ই বলবে।”
আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য?
মিকার পরামর্শ কেবল টুপি শক্ত করে ধরে থাকুন।
(উৎস : টেকক্রাঞ্চ)