মাত্রাতিরিক্ত চিন্তার যন্ত্রণা থেকে মুক্তির পাঁচ জাপানি উপায়

বর্তমানে গতিময় জীবনে মানসিক চাপ, উদ্বেগ আর অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই অতিরিক্ত চিন্তায় ভুগেন। এমন পরিস্থিতিতে জাপানি সংস্কৃতিতে রয়েছে কিছু যুগান্তকারী কৌশল, যা মানুষকে সজীবতা ও মানসিক শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
প্রথম কৌশল : ইকিগাই
জাপানী ভাষায় ইকিগাই অর্থ হচ্ছে "জীবনের উদ্দেশ্য"। এটা এমন এক জায়গা যেখানে আপনার ভালোবাসা, দক্ষতা, প্রয়োজন এবং জীবিকা সবকিছু একত্রিত হয়। জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া মানেই দিকনির্দেশনা পাওয়া, যা স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত চিন্তা কমায়।
দ্বিতীয় কৌশল : শিনরিন-ইয়োকু
শিনরিন-ইয়োকু এর অর্থ হচ্ছে বনস্নান। এটি একটি অনুশীলন যেখানে আপনি প্রকৃতির মাঝে নিজেকে নিমজ্জিত করে মনকে ডিটক্স করেন এবং অপ্রয়োজনীয় চিন্তা ঝেড়ে ফেলেন। এটা দেখতে সহজ মনে হলেও, মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে দারুণ কার্যকর। এটি হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম নয় বরং ধীরে চলা, গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া এবং প্রকৃতিকে অনুভব করার মাধ্যমে ঘটে। গবেষণায় দেখা গেছে, বনস্নান কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) হ্রাস করে এবং অতিরিক্ত চিন্তা প্রশমিত করে। তাই স্ক্রিন ও প্রযুক্তি থেকে দূরে থেকে প্রকৃতিতে কিছু সময় কাটালে আপনি আরও শান্তি অনুভব করতে পারেন।
তৃতীয় কৌশল : কাইজেন
কাইজেন– এর অর্থ হচ্ছে ধারাবাহিক আত্মোন্নয়ন। এই সহজ জাপানি কৌশলটি মানুষকে শেখায় নিজেকে ধীরে ধীরে উন্নত করতে। ছোট ছোট, ধারাবাহিক পদক্ষেপের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ক্রমাগত নিজের ওপর কাজ করতে পারে। নিখুঁত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বা বড় পরিবর্তন আনার চাপ থেকে অনেক সময় অতিরিক্ত চিন্তা আসে। কিন্তু কাইজেন উল্টোটি উৎসাহিত করে – ছোট থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে উন্নতি করতে। আপনি যদি একটি নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে চান বা আপনার চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে চান, তাহলে প্রতিদিনের ছোট ছোট অগ্রগতি আপনার উদ্বেগ কমাতে এবং আপনাকে আরও সুখী হতে সাহায্য করতে পারে।
চতুর্থ কৌশল : ওয়াবি-সাবি
জাপানি ভাষায় ওয়াবি সাবি অর্থ অপূর্ণতাকে গ্রহণ করা। এটি হলো একটি জাপানি সৌন্দর্যবোধ ও দর্শন, যা অপূর্ণতা ও ক্ষণস্থায়ীত্বের মাঝেও সৌন্দর্য খুঁজে পায়। এটি আমাদের শেখায় ত্রুটিকে মেনে নিতে, পারফেকশনিজম ছাড়তে, বর্তমান মুহূর্তে থাকতে এবং জিনিসগুলোকে যেমন আছে, তেমনই গ্রহণ করতে। অতিরিক্ত চিন্তা অনেক সময় আসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থেকে বা নিখুঁত হতে চাওয়ার কারণে। তাই, কারও জীবনে ওয়াবি-সাবি চর্চা করলে অতিরিক্ত চিন্তার অভ্যাস থেকে বের হয়ে বর্তমানে বাঁচা সম্ভব হয়।
পঞ্চম কৌশল : জানশিন
এটি শেখায় প্রতিটি কাজের পূর্বে “মনোযোগপূর্ণ সচেতনতা” এবং পরে পুরোপুরি সজাগ থাকতে। এই পাঁচটি জাপানি কৌশল শুধু মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিই আনে না, বরং জীবনকে করে তোলে আরও অর্থবহ, শান্তিপূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া